রাকিব রিফাত,ইবি প্রতিবেদক: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দুইটি একাডেমিক ভবনের মাঝে ‘বৈশাখী মঞ্চ’ নির্মাণ করতে বৃক্ষ নিধন করেছে কর্তৃপক্ষ। সেখানে মঞ্চ নির্মাণের জন্য ইট, বালু সংগ্রহ করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে পুরো ক্যাম্পাসে। এ ছাড়া মঞ্চ নির্মাণ করায় লেখাপড়ার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রশাসন বৈশাখী মঞ্চ নির্মাণের জন্য দুইটি গুরুত্বপূর্ণ একাডেমিক ভবনের মাঝের জায়গাটি বেছে নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও অনেক জায়গা ছিলো যেখানে একাডেমিক ব্যস্ততা কম। প্রশাসনের এমন কোনো জায়গা বেছে নেওয়া উচিত ছিলো বলে আমরা মনে করছি। বৃক্ষ নিধন করে একাডেমিক পরিবেশের ক্ষতি করে মঞ্চ নির্মাণ করাটা অযৌক্তিক।

এ দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বৃক্ষ নিধনের প্রতিবাদ জানিয়েছে শাখা ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এ ঘটনায় সোমবার (৪ মার্চ) সকালে প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন।

জানা যায়, ‘বৈশাখী মঞ্চ’ নির্মাণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবন এবং ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ ভবনের মাঝে বটতলা সংশ্লিষ্ট এলাকায় একাধিক বড় গাছ কেটেছে কর্তৃপক্ষ। পরে বিষয়টি জানতে পেরে সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে কর্তিত গাছ নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে সেখানে গাছ কাটার বিরুদ্ধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদ।

সংগঠনটির সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ রইলো  যেনো তারা অনতিবিলম্বে বৃক্ষ নিধন করে স্থাপনা নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসেন। যদি প্রশাসন তা না করে তাহলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো।

এ দিকে বৃক্ষ নিধনের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন ডিপ ইকোলজি এ্যান্ড স্নেক কনজার্ভেশন ফাউন্ডেশন ইবি শাখা মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।

মানবন্ধনে সংগঠনটির নেতারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের জন্য গাছ কেটেছে। অনেক সময় অপ্রয়োজনেও গাছ কাটা হয়েছে। প্রশাসন মঞ্চ নির্মাণের জন্য দুইটি একাডেমিক ভবনের মাঝের জায়গাটি বেছে নিয়েছে যা একটি অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। এ ছাড়া এখানে তিনটি প্রাচীন বৃক্ষও কেটে ফেলছে প্রশাসন। এ রকম ঠুনকো কারণে এই গাছগুলো কেটে ফেলায় আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর পরিবেশবাদী সংগঠন ‘অভয়রাণ্য’ বৃক্ষ নিধন করে মঞ্চ নির্মাণের প্রতিবাদ জানিয়েছে। বটতলায় ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কন, গণস্বাক্ষর গ্রহণ ও লেখনীর মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি।

এ দিকে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘গ্রিন ভয়েস’ ক্যাম্পাসে বৃক্ষ নিধন বন্ধের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট স্মারকলিপি দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. আব্দুল মুঈদ বলেন, প্রশাসন অনেকটা তড়িঘড়ি করেই এইসব প্রাচীন বৃক্ষ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রশাসনের উচিত ছিলো পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে উপযুক্ত স্থান বেছে নেওয়ার। তারা এখানে অপরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) কে এম শরীফ উদ্দীন বলেন, প্রশাসন থেকে ওখানে মঞ্চটা স্থাপন করার নির্দেশনা দিয়েছে। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক ইতোমধ্যে ঠিকাদারকে ওয়ার্ক ওর্ডার করে দিয়েছি। সকালে কাজ করতে গেলে শিক্ষার্থীরা সেখানে উপস্থিত হয়। কাজ চলবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশাসন থেকে কিছু না জানানো পর্যন্ত এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবোনা।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত  প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার প্রফেসর ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।